আবার শ্রাবন হয়ে এলো ফিরে


তীরে এসে তরী ডোবার মতো
‘ঘটনাই হচ্ছে খুব সামান্য কারণে কনসিভ করতে না পারার যন্ত্রণা। আর এর জন্য নানা কারণ দায়ী। ঠিক তেমনি ওভুলেশন ডিসঅর্ডার একটি বড় কারণ। প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের পিছনে এই ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরনের জটিলতাই দায়ী। ওভ্যুলেশন নিয়মিত না। হওয়া, একেবারেই ডিম্বাণু নির্গত না হওয়া বেশ কমন সমস্যা। অনেকের আবার ওভারিতে ম্যাচিওর ফলিকল তৈরি না হওয়াতে ডিম্বাণুও পূর্ণতা পায় না। ফল অসফল ওভ্যুলেশন।
ইনফার্টিলিটির পিছনে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমও। অনেকাংশে বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। আসলে ডিম্বাশয়ে যে ফলিকলগুলি পূর্ণতা পায় না সেগুলিই সিস্ট আকারে মালার। মতো ওভারির গায়ে জড়িয়ে থাকে। দেখা গেছে যে সব মহিলারা বন্ধ্যাত্বে ভোগেন তাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশই পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে ভুগছেন। এই সমস্যা হলে মেনস্ট্রয়াল সাইকেল অনেকের বন্ধও হয়ে যায়। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। বাড়তে পারে মোটা হওয়া। আর ওবিজাদের ক্ষেত্রে কনসিভ করতে যে বড় সমস্যা তা আর বলে বোঝাতে হয় না।
আনুমানিক প্রায় ২ শতাংশ মহিলার প্রি ম্যাচিওর মেনোপজ ধরা পড়ছে। ঠিক কোন কারণে জীবনের চুড়ান্ত ফার্টাইল বা জননক্ষম পর্বে ওভারিয়ান ফাংশন বন্ধ হয়ে যায় তা সব সময় বোঝা যায় না। কিছু ক্ষেত্রে অটোইমিউন ডিসঅর্ডার থাকলে, আগে ওভারিতে কোনো অপারেশন হলে বা ক্যানসারের চিকিৎসা করালে এমনটি ঘটতে দেখেছি। এছাড়া আমাদের পরামর্শ একটু খোঁজ নিন পরিবারে দিদি, মা বা দিদিমা এমন কেউ আর্লি মেনোপজে ভূগেছেন কিনা। তেমন হলে প্রেগনেন্সির জন্য। একদম সময় নষ্ট করবেন না।
বন্ধ্যাত্বের পিছনে ফাইব্রয়েড এবং এন্ডোমেট্রিওসিস দুটি বড় কারণ। পরিসংখ্যান বলছে প্রায় ১৫ শতাংশ মহিলা এই সমস্যায় ভোগেন। ইউটেরাসের ভেতরের লাইনিং প্রতিমাসে। ফ্যালোপিয়ন টিউব দিয়ে তলপেটের ভিতরে পড়াই হচ্ছে এনডোমেট্রিওসিস। ইউটেরাসের দেওয়ালে বা কখনও ইউটেরাইন ক্যাভিটির মধ্যে যদি বিনাইন টিউমার হয় তখন তাকে ফাইব্রয়েড বলে। যদিও বিনাইন বলে এই টিউমারে ক্যানসারের তেমন কোন আশঙ্কা নেই। তবুও ফাইব্রয়েড় থাকলে এমব্রায়ো ইমপ্লান্টেশন বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফাইব্রয়েড হলে হেভি মেনস্ট্রয়াল ব্রিডিং হতে পারে। | বন্ধ্যাত্বের আর একটি বড় কারণ হচ্ছে ফ্যালোপিয়ান টিউবের।
সমস্যা। সংক্রমণ বা কোন অস্ত্রোপচার থেকে ফ্যালোপিয়ান টিউব রুদ্ধ হয়। ফলে স্বাভাবিক উপায়ে ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়ে। শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হতে পারে না। পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ বা এই জাতীয় সংক্রমণ থেকে সাবধান। আবার যাদের পেলভিসে সার্জারি হয় তাদের অনেক সময় টিউবে ক্ষত হতে পারে বা টিউবে জট পাকিয়ে গিয়ে তা রুদ্ধ হতে পারে। অনেক সময় ফ্যালোপিয়ান টিউব জলীয় পদার্থে ভর্তি হয়ে যায় – তাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে হাইড্রোস্যালপিঙ্গ। এতে শুধু অসম্ভব পেটে ব্যথাই হয় না উল্টে ইনফার্টিলিটি এবং একটোপিক প্রেগনেন্সির সম্ভাবনাও বাড়ে।
পাশাপাশি এমন অনেকেই আসেন যাদের জরায়ুর গঠনগত বেশ কিছু ত্রুটি থাকে। তাদের ক্ষেত্রেও গর্ভসঞ্চারে সমস্যা হতে পারে। অনেকেরই জরায়ুর দেওয়াল একদিকের সঙ্গে অন্যদিক লেপ্টে থাকে তাতেও সমস্যা তৈরি হয়। সার্ভাইকাল মিউকাসের চরিত্র যদি খুব স্টিকি হয় বা একেবারেই কম থাকে তাহলে শুক্রাণুর বিচরণ বাধাপ্রাপ্ত হয় – ফুল সন্তান ধারনে বিপত্তি। | এসবের থেকেও বড় হচ্ছে আনএক্সপ্লেইণ্ড ইনফার্টিলিটি। বলা নেই কওয়া নেই পরীক্ষায় হয়তো দেখা গেল সম্ভব্য সব। কারনই ঠিক কিন্তু সন্তান আসছে না-এমন উদাহরন অনেক পাই আমরা। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখেছি যে প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই কোন রকম সহায়তা ছাড়াই সন্তান আসছে। তাই হাল। ছেড়ে দেওয়ার কারণ নেই। সমস্যা যেমন আছে সমাধান তেমনি বেরবে। | আর শুধু ইনফার্টিলিটিতে নারীই দায়ী নন সমস্যা পুরুষেরও থাকতে পারে। বিভিন্ন কারণে পুরুষের শুক্রাণু নির্গমন বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাছাড়া টেস্টিসে ত্রুটির জন্য অনেক সময় শুক্রাণুর মানও খারাপ হয়ে যায়। আর সচল, সবল এবং সুস্থ শুক্রাণু না হলে গর্ভসঞ্চারও সম্ভব হয় না। সুতরাং যখনই ইনফার্টিলিটির সমস্যা দেখা দেয় তখন সমস্যা ঠিক কোথায় তা বুঝে নিতে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে নিন সুপ্রজনন বিশেষজ্ঞরা। একবার সমস্যা কোথায় তা নিশ্চিত জেনে যাওয়ার পর চিকিৎসা শুরু করতে সুবিধা হয় এবং সমাধানও সঠিক পথে হয়। যখনই বন্ধ্যাত্বের সম্মুখীন হন অনেকেই হতাশায় ভেঙ্গে পড়েন, চলতে থাকে দাম্পত্য কলহ, শুরু হয় দোষারােপের পালা। অভিযোগ করে সমস্যা সমাধান হয় না। হতাশ হবেন না, সঠিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পেলে সমাধান বেরবেই। তখন সন্তান লাভে সাফল্য শুধু সময়ের অপেক্ষা।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*