কেরিয়ার ভুলে ঘরকন্যা কখনোই না

খবরের কাগজ খুললেই আকছার সঞ্চয় আর ভালো রিটার্নের হাতছানি দিয়ে নানা বিজ্ঞাপন আমার চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এর মাঝেই অনেক লাভজনক প্রকল্পের খোঁজ পেয়ে উপকৃত হিন অনেকেই। সেইসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করে লাভের কড়ি ঘরে তুলেছেন অনেকেই। যারা বৈষয়িক তারা সঠিক বিনিয়োগের মর্ম বোঝেন, কিন্তু যে বিনিয়োগ আর্থিক বস্তুবাদের চাইতেও অনেক বড় সেই বিষয়ে আমরা কতটা সচেতন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে বন্দিতা এখন সমাজ বিজ্ঞানের জটিল বিষয় নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত। দেশ-বিদেশের আলোচনা সভা, সম্মেলন সেমিনারেও নিয়মিত হাজির হতে হয়। ফলে সংসার নিয়ে মাথা ঘামাবার অবকাশ তার নেই। এদিকে বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে বলে বাড়িতে অশান্তি। গবেষণার পাশাপাশি কলেজে অধ্যাপনা করে বছর [৩৫-এর বন্দিতার রোজগারও খারাপ নয়। কিন্তু বিয়ে করার সময় তার নেই বললেই তো চলবে না – এরপর স্বাভাবিক নিয়মে সন্তানধারণও সম্ভব হবে না। মা হওয়া নিয়ে বন্দিতার প্রচুর আগ্রহ কিন্তু গবেষণীও যে ছাড়ার নয়।
উত্তর কলকাতার সাবেকি রক্ষণশীল রাজস্থানি পরিবারে জন্ম তার। তিন পুরুষ ধরে এই কলকাতায় বসবাস ‘তাদের। সমীরা যখন ছোট তার বাবাকে হারায়। বাবার ব্যবসা তখন কাকা-জেঠাদের জিম্মায়। তাদের অনুগ্রহে বড় হয়ে ওঠা সমীরা ক্রমে বাবার ব্যবসার হাল-হকিকৎ বুঝে নিতে শিখে যায়। একার চেষ্টায় সেই ব্যবসাকে সে মহিরূহে পরিণত করেছে। কিন্তু ক্রমেই বেড়েছে সমীরার বয়সও | পরিবার থেকে এসেছে চাপ বিয়ে করার। সব দিক না সামলে সমীরা বিয়ে করতে রাজি নয়। এদিকে বয়স পেরিয়েছে ৩৭। বাড়ি থেকে পাত্র পছন্দ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসা গোছাতে তার চাই আরও তিন বছর। কিন্ত্র ততদিনে যে বয়স ৪০ পেরিয়ে যাবে! এরপর বিয়ে করলে কখন সন্তানধারণ করবেন। আর কখনই বা তাদের মানুষ করবেন?
শুধু বন্দিতা বা সমীরাই নয় মন্দিরা যেমন রেক্টাল ক্যান্সারে ভুগছিলেন। কেমোথেরাপি চলছিল। এর ফলে তার ডিম্বাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বিয়ের পর তার এই অসুখ ধরা পরে। তাই সবার আগে তার প্রাণ বাঁচানোই যখন মন্দির পরিবার ও চিকিৎসকরা কর্তব্য বলে মনে করেছেন ঠিক তখন অন্য রকম ভাবতে শুরু করেন মন্দির।
এমন সমস্যায় যারা উদ্বিগ্ন তাদের জন্য জেনোম ফার্টিলিটি ক্লিনিক নিয়ে এসেছে ওসাইট ক্রায়োপ্রিসারভেশান বা ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখার প্রযুক্তি। পশ্চিমী দেশগুলিতে এই ধরনের প্রক্রিয়া বেশ পরিচিত ও প্রচলিত। যেভাবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা অর্থ, সম্পদ সঞ্চয় করি ঠিক তেমনই ভবিষ্যতে কাজে লাগবে ভেবে ডিম্বাণু বা শুক্রাণু সঞ্চয় করা যেতেই পারে। এর মধ্যে কোনো আইনি জটিলতা নেই। খুব সহজ উপায়েই ডিম্বাশয়কে স্টি্যুলেট করে সেখান থেকে ডিম্বাণু বের করে এনে তুষার দ্রবণ প্রক্রিয়ার পর লিকুইড নাইট্রোজেন ফ্রিজারে হীমাঙ্কের চাইতেও কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে রেখে দেওয়া যায়। পরে প্রয়োজন মতো তা সেখান থেকে বের করে এনে শুক্রাণুর সঙ্গে নিষেক ঘটিয়ে ইউটেরাসে প্রতিস্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে বন্দিত্রা বা সর্মীরা অথবা মন্দিরা ডিম্বাণু সংরক্ষণের কথা ভেবে বেশ বিবেচকের মতোই কাজ করেছেন বলা যেতে পারে। কারণ সাধারণত দেখা যায় যে বয়স ৪০ পেরলেই স্বাভাবিক হারের চাইতে ডিম্বাণু উৎপাদন কমে যায় বা একেবারে বন্ধই হয়ে যায়। যাকে আমরা সাধারণত মেনোপজ নামে চিনি। তাই এহেন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে এবং মাতৃত্বের অতৃপ্ত স্বাদ পূরণ করতে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করা যেতেই পারে। দক্ষ সংগ্রাহক এবং উপযুক্ত পরিকাঠামোর জন্য জেনোম সর্বজনবিদিত।
বিশ্ব জুড়ে এই ডিম্বাণু সংরক্ষণ বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাপেল, ফেসবুক তাদের মহিলা কর্মীদের এগ ফ্রিজিং-এর জন্য ৯০ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান দিয়ে থাকে। যাতে তাদের কর্মজীবন কোনো ভাবেই ব্যক্তি জীবনকে নষ্ট না করে। সন্তানধারণ বা সংসার ধর্ম পালন করার জন্য যাতে কাউকে কেরিয়ারের সঙ্গে আপোষ না করতে হয় তাই এই ব্যবস্থা। ফলে ক্রমশই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এই ধরনের সংরক্ষণ।
ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই ধরনের সঞ্চয় শুধু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নয় অনেক মাঝ বয়সী দম্পতিও আগ্রহী হচ্ছেন। আচমকা কোনো দুর্ঘটনায় সন্তান বিয়োগের শোক ভুলিয়ে দিতে পারে ফের নবজাতকের হাসি। কিন্তু তার জন্য চাই সময়োচিত সঞ্চয়ের সিদ্ধান্ত। প্রযুক্তি যখন হাতের মুঠোয় তখন সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত হবেন কেন?

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*