অনেক পাওয়ার মাঝে মাঝে

সংক্রমণ তা সে যেমনই হোক না কেন আসলে এক নিঃশব্দ ঘাতক। আর পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ বা পি, আই, ডি হচ্ছে এমনই এক ভয়ানকসংক্রমণ যা ছড়ায় তলপেট ও সংলগ্ন অঞ্চলে। যার থেকে জরায়ু, ফ্যালোপিয়ন টিউব এবং ডিম্বাশয়। আক্রান্ত হয়। এই সব অঙ্গ যখন সংক্রমণের কবলে আসে তখন নানা শারীরিক অসুবিধার সঙ্গে বন্ধ্যাত্বও ডেকে আনে। মনে। রাখবেন এই সব পি আই ডি-এর ক্ষেত্রে। সংক্রমণ প্রবেশ দ্বার হচ্ছে মূলত সার্ভিক্স বা জরায়ুমুখ | আর পরিসংখ্যান দাবী করে যে। এই ধরনের সংক্রমণের জন্য সেক্সয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশনই দায়ী। এই সমস্যাগুলির জন্য দেখা গেছে যে। গনোকক্কাস বা ক্ল্যামাইডিয়াই খলনায়কের ভূমিকা পালন করে। গনকক্কাল ইনফেকশান একাধিক পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্কের ফলে হয়। গর্ভহানি বা মিসক্যারেজের পর, প্রসবের পর এবং কোনো জনন অঙ্গে সার্জারির পর ক্ল্যামাইডিয়া। শরীরে প্রবেশ করে, পি. আই. ডি হতে পারে।
পি. আই. ডি যদি হয় তখনই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তার আগে এই সমস্যার উপসর্গগুলি জেনে নেওয়া দরকার। যদি অস্বাভাবিক। ডিসচার্জ, তলপেটে ব্যথা, অসম্ভব ব্যথার জন্য দাম্পত্যে । অনিহা, দু’টি মেনস্ট্রয়াল সাইকেলের মধ্যবর্তী সময়ে রক্তপাত, ঘুষঘুষে জ্বর, শরীরে সব মিলিয়ে একটা ভাল না লাগা অনুভুতি যদি হয় বুঝতে হবে যে পি আই ডি প্রভাব বিস্তার করছে। এর থেকে জরায়ুরর ভিতরের দেওয়ালে প্রদাহ হলে হয়। এনডোমেট্রাইটিস, ফ্যালোপিয়ন টিউবে প্রদাহ হলে হয়। স্যালপিঞ্জাইটিস, ডিম্বাশয়ে প্রদাহ হলে হয় উফোরাইটিস, পেটের আভ্যন্তরীন দেওয়ালে বা তার ঝিল্লিতে প্রদাহ দেখা দিলে পেরিটোনাইটিস হতে পারে। এই সমস্যাগুলি যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয় তখন বড় বিপত্তি ঘটতে পারে। যেমন অবাঞ্ছিত জায়গায় গর্ভসঞ্চার বা একটোপিক প্রেগনেন্সি আসতে পারে, সমস্যা বেড়ে আসতে পারে বন্ধ্যাত্বও।
| বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে সন্দেহ দুর করতে জননাঙ্গ পরীক্ষা। করেন। ঠিক কী ধরনের সংক্রমণ তা বুঝতে সার্ভিক্স থেকে সোয়াব সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি রক্ত পরীক্ষাও হয়। প্রয়োজন পরলে আল্টা সোনোগ্রাফি করতে হয়। যদি পেটের উপর দিয়ে পরীক্ষা হয় তাকে বলে অ্যাবডোমিনাল টেস্ট, প্রসবদ্বারের মধ্যে দিয়ে যদি পরীক্ষা হয় তাকে বলে ট্রান্স ভ্যাজাইনাল টেস্ট। অনেক সময় পি আই ডি জটিল আকার ধারণ করলে তার অবস্থান ফ্যালোপিয়ন টিউব এবং পেলভিক অঞ্চলে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে তা বুঝতে ল্যাপারোস্কোপিক বা কি হল সার্জারি করতে হতে পারে। তার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। সার্জারি শুনে ভয় পাবেন না। শুধুমাত্র সংক্রমণের প্রভাব বুঝতেই অজ্ঞান অবস্থায় তলপেটে ছোট্ট তিনটি ফুটো করে সেই পথে টেলিস্কোপের মত যন্ত্র প্রবেশ করানো হয়। সব ক্ষেত্রেই সার্জারি। বাধ্যতামূলক নয়, পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ যদি খুব জটিল এবং নাছোড়বান্দা প্রকৃতির হয় তখনই কেবলমাত্র সার্জারি করার প্রয়োজন আসে। | পি, আই, ডি ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু করতে হয়। প্রথমে ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। তিন দিন কেটে গেলে যদি কোন সুরাহা না হয় তখন চিকিৎসা গতিমুখ বদলাতে হয়। সমস্যা। জটিল হলে হাসপাতালে ভর্তি করে অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন। দিতে হয়। বাড়ি ফিরেও চোদ্দ দিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো । কোর্সটি শেষ করা জরুরি। মনে রাখবেন ওষুধের পুরো কোর্সটি শেষ না করলে কিন্তু প্রদাহ ফের জাঁকিয়ে বসতে পারে। চার সপ্তাহ বাদে রােগীকে পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয় আর কোন সংক্রমণ বাকি আছে কি না। সংক্রমণ খুব বেয়াড়া আকার নিলে অনেক ক্ষেত্রে পেলভিক অ্যাবসেস দেখা দেয়। তখন তলপেটের সেই সংক্রমিত পুঁজ বা যুইড বের করতে হয় অপারেশনের মাধ্যমে।
এই রোগ বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখলে বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদের সমস্যা হতে পারে। একঘেয়ে ও প্রবল বিরক্তিকর। ব্যথা, মেনস্ট্রয়াল সাইকেলের প্যাটার্নে বদল আসার মত নানা সমস্যা তো আছেই। তার সঙ্গে উপরি হিসেবে জুড়ে যায়। একটোপিক প্রেগনেন্সি এবং বন্ধ্যাত্বও | মনে রাখবেন আপনার থেকে আপনার সঙ্গীও সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন, তাই উভয়েরই পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। আর চিকিৎসাও দুজনের দরকার। ফলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে না এবং তা বন্ধ্যাত্বের কারণও হয়ে ওঠে না।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*