অমৃত সুদনে চলো যাই..

রথযাত্রার ঠিক সাত দিন পর আসে
উল্টোরথ। যেকোন ক্রিয়ার প্রতিবর্ত ক্রিয়া হিসাবে যদি দেখি তাহলে উল্টোরথও অনেকটা তাই। সময়ের সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞান যেমন আধুনিক হয়েছে। তেমনি রোগ নির্ণয়ের পন্থাও হয়েছে যথেষ্ট যুক্তিনিষ্ঠ। নাড়ি টিপে রোগ বাতলে দেবার মত দুঃসাহস আজ আর কেউ করেন না। তাই আজ রোগ নিরাময়ের প্রথম এবং আসল পন্থাই হচ্ছে সঠিক রোগ নির্ণয়।
হ্যা এই প্রক্রিয়া একটু সময় সাপেক্ষ এবং অবশ্যই বেশ কিছু পরীক্ষা – নির্ভর। আর এই পরীক্ষা চিকিৎসার জন্য বেশ গুরত্বপূর্ণ। নয়তো সঠিক পথ বুঝতে না পেরে সুচিকিৎসাও সম্ভব হবে না। আর বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তো পরীক্ষা নিতান্তই বাঞ্ছনীয়। পরীক্ষা না হলে তো বন্ধ্যাত্বের সঠিক কারণ তথা প্রকৃতি সম্পর্কেই অন্ধকারে থাকতে হয়। ফলে সন্তান লাভ আরও পিছিয়ে যায়। | তাই আজও যখন অনেকেই আমাদের কাছে প্রথমবার এসে দেখানোর পরই কোনো ওষুধ আশা করেন তখন তাদের মত আমাদেরও হতাশ হতে হয়। এই ধরনের ভাবনার মুলে গিয়ে কুঠারাঘাত করা দরকার। মনে রাখতে হবে চিকিৎসক কোনো জাদুমন্ত্র জানেন না। তিনিও একজন স্বাভাবিক মানুষ। তাই তাকে আগে সমস্যাটি ঠিক কি তা বুঝে নিতে দিন। তাই আমাদের কাছে – যারাই সন্তানহীনতার সমস্যা নিয়ে আসেন তাদের জন্য নির্দিষ্ট বেশ কিছু পরীক্ষা করিয়ে নিই আমরা।
প্রথমেই বন্ধ্যাত্বের সমস্যার কথা উল্লেখ করলে আমরা মহিলাদের আগে তাদের পুরুষ সঙ্গীকে শুক্রাণু পরীক্ষা করাতে। বলি। তাদের বলা হয় তিন থেকে পাঁচদিন স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে স্পার্ম কাউন্টের পরীক্ষা করাতে। তাতে দেখে নেওয়া হয় সিমেনে আদৌ শুক্রাণু আছে কিনা। থাকলে স্পার্ম। কাউন্ট বা সংখ্যায় কত? আবার শুক্রাণুর গুণগত মানও পরীক্ষা করানো হয়, দেখে নেওয়া হয় তা মােটাইল বা সচল কিনা।
এরপর মহিলাদের পরীক্ষা করতে হয়। তাদের ক্ষেত্রে মেনস্ট্রয়াল সাইকেলের দু’থেকে পাঁচদিনের মধ্যে রক্ত পরীক্ষা করে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমােন (FSH), লুটিনাইজিং হরমােন (LH), থাইরয়েড স্টিলেটিং হরমোন (TSH), প্রো-ল্যাকটিন।
এবং ইস্ট্রাডায়লও পরীক্ষা করে দিতে হয়। এছাড়া সু-প্রজনন বিশেষজ্ঞরা স্যালাইন ইনফিউশন সোনোগ্রাফি (SIS) করে নিতে বলেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে যাওয়া যায় যে জরায়ু অথবা। ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে কোনো বাধা আছে কিনা। এখানে সমস্যা থাকলে স্বাভাবিক উপায়ে নিষেক সম্ভবপর নয়। এর পাশাপাশি কোনো ধরনের সংক্রমণ রয়েছে কিনা তা বুঝতে নারী-পুরুষ উভয়েরই পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া হয়। পুরুষের যুইড ও মহিলাদের পেলভিক স্তর থেকে সোয়াব বা রস সংগ্রহ করে কালচার সেন্সিটিভিটি (C/S) টেস্ট করা হয়। সমস্যা আরও জটিল হলে হিস্টেরােস্কোপি, ল্যাপারােস্কোপির সহায়তা নিতেই হয়। জননাঙ্গে কোনো জটু অ্যাডহেশন রয়েছে কিনা আর থাকলে তা থেকে মুক্তিও একেবারে করা সম্ভব। এই ধরনের প্রক্রিয়ায়।
শুধু বন্ধ্যাত্ব কেন? স্ত্রী ও ধাত্রীবিদ্যার যে কোনো অপারেশন এর আগেও বেশ কিছু রুটিন পরীক্ষা করাতে হয়। অপারেশন তা সে যতই ছােট হােক না কেন সার্জারির পুর্বে বেশ কিছু পরীক্ষা জরুরি। রােগীর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যই সার্জারির পুর্বে হিমােগ্লোবিনের (HB) মাত্রা দেখে নেওয়া হয়। তাছাড়াও প্যাকড সেল ভল্যম (PCV), টোটাল কাউন্ট (TC), ডিফারেন্সিয়াল কাউন্ট (DC), প্লেটলেট কাউন্ট (Platelet), ব্রিডিং টাইম (BT), ক্লটিং টাইম (CT), এরিথ্রোসাইট। সেডিমেন্টেশন রেট (ESR), পরীক্ষা করা হয়। এর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রক্তে শর্করার বা চিনির পরিমাণ কতটা রয়েছে তা দেখে নেওয়া। ফাস্টিং বা পোস্ট প্রান্ডিয়াল (PP) পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার হয়। মনে রাখবেন ব্লাড সুগার যদি বেশি হয় তখন সমস্যা অনেক বেড়ে যায়। সার্জারির পর সেলাই শুকোতে সময় বেশি লাগে। আবার চিকিৎসক যদি মনে করেন অপারেশনের আগে কিডনি কতটা সচল তা বুঝে নেবেন তখন ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিন-এর মাত্রা দেখে নিতে হয়। পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় যে রক্তে হিমােগ্লোবিনের মাত্রা ১০ শতাংশের কম। তখন রক্ত জোগাড় করে রাখতে বলা হয়। আর আগে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে নিতে হবে। তাই বিনা ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় চিকিৎসা শুরু করা একেবারেই সম্ভব নয়। রথ হলে পরে উল্টোরথ হওয়ার মতই চিকিৎসা করিয়ে সুফল পেতে গেলে এই পরীক্ষাগুলো করানোই উচিৎ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*