মলিন মুখে ফুটুক হাসি..

স্ত্রী-রোগের চিকিৎসায় এক যুগান্তকারী বদল এনেছে আধুনিক চিকিৎসা। প্রযুক্তি। আগে যেখানে পেট কেটে বা খানিকটা আন্দাজে জরায়ুর ভিতরের চিকিৎসা করা হত ‘ডি অ্যান্ড সি’-র মাধ্যমে, আজ হিস্টেরোস্কোপ যন্ত্রের আগমনের ফলে হয়েছে বেশ সহজ। এক ধরণের ছোট টেলিস্কোপ। যার এক প্রান্তে থাকে ভিডিও ক্যামেরা। আর এই হিস্টেরোস্কোপ যন্ত্র প্রসবের পথ দিয়ে জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার। পর সেই ক্যামেরা বাহিত অভ্যন্তরের ছবি দেহের। বাইরে বড় মনিটরের পর্দায় ফুটে উঠলে – বিশেষজ্ঞরা অনায়াসেই বুঝতে পারেন সমস্যা ঠিক কোথায়।
সাধারণত সার্ভিক্স বা জরায়ু মুখ দিয়ে হিস্টেরােস্কোপ প্রবেশ করানো হয়। হিস্টেরোস্কোপ একটি নলের মধ্যে দিয়ে দেহে প্রবেশ করানো হয়। তাতে ইনফ্লো এবং আউটফ্লো চ্যানেল থাকে। সেই চ্যানেল – পথে তরল বা । কার্বণ ডাই অক্সাইড প্রবেশ করাতে পারলে। জরায়ুর ভিতরটা স্পষ্ট দেখা যায়। যাকে ডায়াগনস্টিক হিস্টেরোস্কোপি বলে। একই সঙ্গে অনায়াসে অপারেশনও সারা হয়ে যায়। একে । অবশ্য তখন অপারেটিভ হিস্টেরোস্কোপি বলে। একদা ডাইলেটেশন অ্যান্ড কিউরেটেজ বা ‘ড়ি। অ্যান্ড সি’ নামে যে পদ্ধতিতে আন্দাজে ভর করে এনডোমেট্রিয়াম বা জরায়ুর লাইনিং তুলে আনতে হত তাই আজ হিস্টেরােস্কোপের সহায়তায়। একেবারে নিক্তি মেপে সেরে ফেলা যাচ্ছে। যার ফলে একচুলও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। জরায়ুর ভিতরের পুরােটা বা প্যানারোমিক ভিউ অনায়াসেই দেখতে পান বিশেষজ্ঞরা। ফলে সহজেই সমস্যার আসল কারণ অনুধাবন করা সম্ভব হয়। | শুধু রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস করার জন্য নয়, নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার সমাধানেও। হিস্টেরোস্কোপি কাৰ্য্যকর হয়। অনিয়মিত, অতিরিক্ত মেনস্ট্রয়েশনের সমস্যা, মেনোরেজিয়ার কারণ সহজেই প্রকাশ পায় এই পদ্ধতিতে। পাশাপাশি ইউটেরাইন পলিপ, ফাইব্রয়েড, কোনো টিউমার হলে সর্বোপরী ক্যানসারও নির্ণয় করতে এই প্রযুক্তির জুড়ি মেলা ভার। ইনফার্টিলিটির ক্ষেত্রে হিস্টেরােস্কোপি দুর্দান্ত সফল। যদি জরায়ুতে কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকে তখন হিস্টেরোস্কোপির সাহায্যে তা জেনে নিয়ে চিকিৎসা করানাে যায়। আশারম্যান’স সিনড্রোম।
বা ইন্ট্রা ইউটেরাইন অ্যাডহেশনে হিস্টেরোস্কোপ ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া গর্ভপাত হলে। প্রেগনেন্সির অবশিষ্টাংশকে এই পদ্ধতির সহায়তাতেই বাইরে বের করে আনা যেতে পারে। আবার যারা ইন্ট্রা ইউটেরাইন ডিভাইস বা আই.ইউ.ডি ব্যবহার করেন, তাদের যদি সেই ডিভাইস কখন সরে যায় বা জরায়ুর দেওয়ালে গেথে যায় তখন তা বের করে আনতেও হিস্টেরােস্কোপ দারুন কাজ দেয়। যদিও গর্ভপাত করানোর ক্ষেত্রে এর ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয় না, কিন্তু পলিপ বাদ দেওয়ার অপারেশন এতে করা যায়। ছোট ফাইব্রয়েডের অপারেশনও করা যায় এতে। সন্তান জন্মের পর মধ্য বয়সে অনেকেরই হেভি মেনস্ট্রয়েশনের সমস্যা হয়। তখন তাদের ট্রান্স সার্ভাইক্যাল রিমুভাল অফ এনডোমেট্রিয়াম বা টি.সি.আর.ই অপারেশন। হিস্টেরোস্কোপিতে সেরে ফেলা যেতে পারে।
হিস্টেরােস্কোপের সুবিধা প্রচুর। প্রথমত একেবারে নিখুঁত ডায়াগনােসিস সম্ভব হয়। ফলে চিকিৎসায় সাড়া মেলে ভালােই। দ্বিতীয়ত খুব চটজলদি এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা হয়ে যায়। তৃতীয়ত পেট কাটার প্রয়ােজন হয় না। সাধারণত ডায়াগনােস্টিক হিস্টেরােস্কোপিতে মিনিট ১৫ সময় লাগে। নার্সিং হােম বা হাসপাতালে খুব। জোর তিন ঘন্টা থাকলেই যথেষ্ট। তবে টি. সি. আর. ই.-এর ক্ষেত্রে সময় লাগে ৪৫ মিনিট, আধবেলা বা একদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। মুলত অল্প সময়ের জন্য জেনারেল। অ্যানাস্থেশিয়াতে কাজ সেরে নেওয়া যেতে পারে। ল্যাপারােস্কোপি বা কী-হােল সার্জারিতে পেটে সামান্য ফুটো করাতে হয় – কিন্তু হিস্টেরােস্কোপিতে তারও বালাই নেই, ফলে সৌন্দর্যহানীর বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা যেমন নেই, তেমনি দীর্ঘ সময় হাসপাতালে কাটাতে হয় না। রক্তপাত কম হয়। কিন্তু এখানে বলে রাখা ভালাে। যে হিস্টেরােস্কোপি কোনােদিনই ল্যাপারােস্কোপির বিকল্প হতে পারে না। কারণ হিস্টেরােস্কোপি দিয়ে জরায়ুর ভিতরের চিকিৎসা হয়, আর ল্যাপারােস্কোপির সাহায্যে পেটের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমস্যার সমাধান হয়।
যেহেতু সার্ভিক্স দিয়ে ক্যামেরা প্রবেশ করানাে হয় তাই দক্ষ হাতেই হিস্টেরােস্কোপি করানাে ভালাে নচেত বিপদ বাড়তে পারে। অসাবধানে জরায়ুতে আঘাত লাগতে পারে, বেশি রক্তপাত হাতে পারে এমনকি ফুটোও হয়ে যেতে পারে। তাই অভিজ্ঞ হাতেই করা ভালাে হিস্টেরােস্কোপ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*