ক্যানসার ও কেমোথেরাপি

আধুনিক ক্যানসার চিকিৎসার অন্যতম উপাদান হল কেমোথেরাপি। বেশিরভাগ ক্যানসারেই, রোগের এবং চিকিৎসার কোনো না কোনো স্তরে কেমোথেরাপির। কম-বেশি অবদান থাকে। শব্দগত অর্থ দেখতে গেলে কেমো, মানে কেমিক্যাল, মানে রাসায়নিক। আর থেরাপি, মানে চিকিৎসা। অর্থটা সরল,- রাসায়নিক দিয়ে চিকিৎসার নামই কেমোথেরাপি। তাই শুধু ক্যানসার না, অন্যান্য অনেক রোগেই কেমোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়।
অথচ ক্যানসারের বেলায় এই শব্দটার সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে আশা আর আশঙ্কার দোলাচল। এমন অনেক ক্যানসার আছে যেখানে। কেমোথেরাপি দিয়েই ক্যানসারের তীব্রতা কমানো যায় ; এমনকী, সারিয়ে তোলা যায়। আবার । অনেক ক্যানসার আছে যেখানে। অস্ত্রোপচার বা বিকিরণ চিকিৎসার সঙ্গে কেমোথেরাপি না-দিলে চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয় না, প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যায় না। তাই ক্যানসার চিকিৎসা যত আধুনিক হয়েছে কেমোথেরাপির ব্যবহার ততই বেড়েছে। আশাও বেড়েছে।
কিন্তু আশঙ্কাগুলোও অমূলক নয়। যেমন, শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা। কারণ, ক্যানসার চিকিৎসায় যে ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তা কোষের উপর বিষের মত কাজ করে। শুধু ক্যানসার কোষ না, শরীরের কোনো কোষই এই বিষক্রিয়া থেকে রেহাই পায় না। তাই চিকিৎসার দুর্ভোগ। থাকেই, কম বা বেশি। তবে এই দুর্ভোগ বেশিকাল থাকে
শরীরের সুস্থ কোষগুললো নিজেদের চেষ্টায় আর । ডাক্তারি পরিচর্যায় ক্রমশ সতেজ হয়ে ওঠে। রোগীও ক্রমশ দুর্ভোগ কাটিয়ে সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন। | কিন্তু যা দুর্বিষহ তা হল আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা। কেমোথেরাপির জন্য যে রাসায়নিক (বা ওষুধ) ব্যবহার করা হয় তার বেশিরভাগই মহার্ঘ। তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক খরচ-খরচাও কম না। এই ব্যয়বহুলতার কারণেই অসংখ্য রোগী এই চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকেন। আবার অনেকে সর্বস্ব ত্যাগ করে চিকিৎসা করেও হয়তো আশানুরূপ সুফল পান না। তখন আর্থিক ক্ষতিটা আরো মারাত্মক হয়ে ওঠে। এ আমাদের সকলেরই পরিতাপের কথা।
আর এরই সঙ্গে যখন চিকিৎসার পরিবেশ অনান্তরিক হয়ে যায় তখন ওই আশঙ্কাগুলোই রোগীকে মানসিকভাবে আরো বিপর্যস্ত করে ফেলে। চিকিৎসার সুষ্ঠু, পরিচ্ছন্ন, সহৃদয় পরিবেশ তৈরি হয় হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকা আর অচিকিৎসক কর্মীদের যৌথ প্রচেষ্টায়। তাতে রোগীর কষ্ট আর দুর্ভোগগুলো আরেকটু সহনীয় হয়। কিন্তু অমন পরিবেশ অনেক সময়েই ক্যানসার রোগীদের কপালে জোটে না। এ আমাদের মর্মান্তিক লজ্জা ছাড়া আর কী। আমাদের প্রতিষ্ঠান, মাইক্রোল্যাপ-এর সঙ্গে জড়িত
সকলেই কিন্তু এই বিষয়গুলো নিয়ে সর্বদা সচেতন থাকেন। এখানে ক্যানসার কেমোথেরাপি প্রায় দুই দশক ধরে একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। সেই অভিজ্ঞতার উপর দাঁড়িয়ে, কীভাবে রোগীর শারীরিক দুর্ভোগ কমানো যায়, কীভাবে তাকে মানসিক স্বস্তি দেওয়া যায় তা নিয়ে চিকিৎসক সমেত সকল কর্মী যথেষ্ট সতর্ক থাকেন। এরই সঙ্গে। আমাদের চিকিৎসকরা আরো কিছু দায়িত্ব পালন করেন।
তারা যেমন রোগীর কাছে। কেমোথেরাপির উপকারিতা ব্যাখ্যা করেন তেমনি অপকারের কথাও।
গোপন করেন না। তাঁরা। কেমোথেরাপি নিয়ে যথেচ্ছাচার করেন না। এমনকী, কোথায়, কীভাবে সহজে আর সুলভে ওষুধপত্র পাওয়া যায়। তার ব্যবস্থা করেও তারা রোগীদের সাহচর্য দেন। এই বন্ধুতার পরিবেশ আছে বলেই আমাদের রোগীরা এখানে। স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। তাই রোগের বিড়ম্বনা নিয়েও তাঁদের আন্তরিক হাসি আমাদের কাছে আশীর্বাদ, আমাদের প্রেরণা।